বর্ণনা | - | |||||||||||||||||||||||||||
চাষপদ্ধতি | o বপনের পূর্বেউপযুক্ত আবহাওয়াঃ পাট উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ার ফসল। পাট উৎপাদন মৌসুমের অনুকূল তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেঃ এবং বাতাসের আদ্রতা ৯০% । পাট বর্ষজীবি, দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। ১২৫-২০০সেঃমিঃ বৃষ্টিপাত পাট চাষের জন্য অনুকূল। বৃষ্টিপাতের মধ্যে ৩০সেঃমিঃ ফসলের প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে হলে ফলন বৃদ্ধি পায়। চারা বৃদ্ধি প্রাথমিক অবস্থায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত পাটের জন্য ক্ষতিকর, কারণ চারা অবস্থায় পাট দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময়ে একান্তরভাবে বৃষ্টিপাত পাটের উচ্চ ফলনে সহায়ক। মার্চ-মে মাসে শিলাবৃষ্টি হলে কচি পাট গাছ ভেঙ্গে ফলন কমে যায়। বীজ সংগ্রহঃ তিনটি উপায়ে ভালবীজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। যথাঃ (১) নিজ খামারে ভালমানের বীজ উৎপাদন করে নিজের জন্য ব্যবহার করা অথবা বীজ প্রত্যয়ন সংস্থার তত্বাবধানে মাননিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্টে প্রক্রিয়াজাত করে। (২) দেশের মধ্যে বিশ্বস্ত বীজ কোঃ থেকে। (৩) বিদেশ থেকে ভালমানের বীজ আমদানি করে। পাটের উন্নত জাতের বীজের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কতৃক উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত বীজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কতৃক মনোনীত বীজ ডিলার এর মাধ্যমে বীজ ক্রয় করা যায়। বীজ ক্রয়ের পূর্বে বীজের প্যাকেটের ভিতর অথবা গায়ে ট্যাঁক বা নির্দেশিকা টি ভালভাবে পড়তে হবে। এর মাধ্যমে বীজের জাত,উৎপাদন সন,বীজ পরীক্ষার তাং ইত্যাদি জানা যাবে। বীজ হারঃ পাটের বীজের অঙ্কুরোদগম ৯০-৯৫% হলে ভাল। পুরাতন বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। পুরাতন বীজ নিম্নমানের হয়। ছকঃ পাটের বীজের হার
ছিটিয়ে বপন অপেক্ষা সারিতে বুনলে বীজ কম লাগে। সারিতে বপন করলে পাটের আঁশের ফলন ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। সারি পদ্ধতিতে চাষ করলে আন্তঃপরিচর্চা ও বালাইনাশক প্রয়োগ সহজ। বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষাঃ বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য চারশতটি বীজ এলোপাতাড়িভাবে গ্রহন করা হয়। এ চারশতটি বীজ গজানোর জন্য উপযুক্ত অবস্থা প্রদান করা হয়। এ অবস্থায় রেখে নির্দিষ্ট সময় পরে বীজ হতে উদ্গত সুস্থ চারা গণনা করা হয়। অক্সিজেন,পানি এবং তাপমাত্রা- এ তিনটি বীজ অঙ্কুরোদগম পরীক্ষার জন্য আবশ্যক। পেত্রিডিশে টিস্যু পেপার বা নিউজপ্রিন্ট কাগজ বিছিয়ে দিয়ে দিতে হবে। এর পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে পানি ফেলে এর উপর একশটি করে বীজ চারটি পেত্রিডিশে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে হবে যাতে একটি বীজের সাথে অন্য একটি বীজ লেগে না যায়। এর পর পেত্রিডিশের ঢাকনা বন্ধ করে দিতে হবে। এ পদ্ধতিকে বলে (TP), অর্থাৎ টপ অব পেপার। নির্দিষ্ট সময় পরে (পাটের বীজ বসানোর ৫ দিন পর) স্বাভাবিক চারার সংখ্যা গণনা করা হয়। গজানো চারা বীজ পরীক্ষার পাত্র হতে উঠিয়ে হাতে নিয়ে দেখতে হবে চারার শিকড়, বীজপাতা, কাণ্ড ও পাতা ঠিক আছে কিনা। যদি এগুলো না থাকে বা দাগি হয় অথবা পচা দেখা যায় কিংবা আনুপাতিক হারে চারা খুব ছোট বড় বা ছোট হয়, তাহলে চারাটিকে অস্বাভাবিক চারা হিসেবে আলাদা করে ফেলতে হবে। অস্বাভাবিক চারা, অগজানো চারা এবং মৃতবীজ গুলো আলাদা করার পরে যে চারাগুলো থাকে সেগুলো হল স্বাভাবিক চারা। স্বাভাবিক চারার শিকড়, কাণ্ড ও পাতা সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হতে হবে। মোট ১০০টি করে বীজ বসানো চারটি পাত্রের স্বাভাবিক চারার সমষ্টি এবং গজানো পরীক্ষায় বসানো ৪০০টি বীজের অনুপাত ই হল বীজ অঙ্কুরোদগম হার। স্বাভাবিক চারার সংখ্যা অঙ্করোদ্গমের শতকরা হার = ................................ X ১০০ পরীক্ষায় বসানো বীজের সংখ্যা নিচের সুত্রের সাহায্যে অঙ্কুরোদগমের শতকরা হার নির্ণয় করা যায়। পাটের বীজের র্যাগডল (অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা)ঃ আমাদের দেশে শতকরা ৭৫% ভাগ বীজই বাজার হতে সংগ্রহ করা হয়। এসব বীজ সাধারণত নিম্নমানের। এতে পাট চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই বীজ বপনের পূর্বে বীজ গজানোর পরীক্ষার নিজেই করে নিলে প্রতারনার হাত হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যা যা করতে হবে তা নিম্নরুপঃ
বীজ শোধনঃ পাট ফসলে প্রধানত বীজবাহিত (Seed borne) রোগ হয়। যেমন-
বীজ শোধন করলে এই রোগসমূহের আক্রমনের কমে যায়। বীজ শোধনের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতির যে কোন একটি গ্রহণ করা যায়- বীজে ছত্রাকনাশক প্রয়োগঃ প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম ক্যাপ্টান বা ৬ গ্রাম গ্রানসান এম বা এগ্রোসান জি এন বীজের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। রোটারি ড্রাম সীড ট্রিটার দ্বারা বীজে ঔষধ মেশানো যায়। ছত্রাকনাশক পদ্ধতিঃ শোধনের জন্য প্রতি ১০ কেজি পাট বীজের জন্য ৫০-৬০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ প্রয়োজন হয়। এজন্য প্রথমে বীজ ভালভাবে ঝাড়াই বাছাই করে পাকা মেঝের উপর শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর শক্তভাবে এমন কাঁচের পাত্র কিংবা বড় কোঁটায় বীজ রেখে পরিমাণমত ঔষধ দিয়ে ঢাকনা এঁটে দিতে হবে। এরপর পাত্রটিকে ১০ মিনিট ঝাঁকাতে হবে। তারপর পাত্রটি ২৪ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। বেশি পরিমাণ বীজ শোধন করতে হলে রোটারি ড্রামে বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধনের সময় হাতে মোজা, নাকে মুখে রুমাল এবং চোখে চশমা ব্যবহার করতে হবে। চাষের মৌসুম/ বীজ বপনের সময়ঃ গ্রীষ্ম মৌসুমে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে পাট বীজ বপন করতে হয়। উচ্চ তাপমাত্রা,দীর্ঘ দিবস পাটের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। দেশি পাটের চেয়ে তোষা পাট কিছুটা পরে বুনতে হয়। যদি জমিতে জুলাই মাসে পানি জমে যাবার সম্ভবনা থাকে তবে পাট বীজ কিছুটা আগাম বপন করা প্রয়োজন। চাষের উপযোগী মাটি ও জমিঃ
সার প্রয়োগঃ জমি তৈরি করার সময় নিম্নলিখিত হারে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। সারণীঃ পাটের সার প্রয়োগ
Sowing (বপন/রোপণ)পাটের বীজ বপনঃ আমাদের দেশে সাধারণত ছিটিয়ে পাটের বীজ বপন করা হয়। এক্ষেত্রে শেষ চাষ দেওয়ার পর বীজ ছিটিয়ে এবং মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। জমিতে বড় বড় ঢেলা থাকলে বোনার পর পর মুগুর দিয়ে তা ভেঙ্গে দিতে হবে। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে দেশি পাটের সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫সেমি এবং তোষা পাটের জন্য ২৫-৩০ সেমি। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব উভয় পাটের ক্ষেত্রে ৫-৭সেমি। Growing stage: (বৃদ্ধি পর্যায়)জমিতে আঁচড়া দেওয়াঃ জমিতে আঁচড়া দিয়ে অল্প পরিশ্রমে আগাছা দমন এবং প্রয়োজনমত গাছ কিছুটা পাতলা কর সম্ভব। এছাড়া আঁচড়া দিলে জমির উপরিভাগে মাটি আলগা থাকে, ফলে মাটির ভিতর সহজে বায়ু প্রবেশ করে। গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ভালো হয়। অনেক সময় বৃষ্টির পরে জমির উপরিভাগের মাটি চাপ বেঁধে যায়। তখন আঁচড়া দিয়ে চাপ ভেঙ্গে দিতে হয়। চাপ ভেঙ্গে দিলে ঐ জমিতে রস সংরক্ষিত থাকে। ফলে সাময়িক খরা হলেও গাছ ঐ রসের উপর টিকে থাকতে পারে। গাছের উচ্চতা ২০ সেমি পর্যন্ত আঁচড়া দেওয়া চলে। আগছা দমনঃ পাটের জমিকে আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। আগাছা বেশি হলে জমিতে খাদ্যের অভাবজনিত কারণে পাটের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। জমিতে আগাছার পরিমাণ কম হলে দুবার নিড়ানি দিলেই চলে, পাট বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রথম নিড়ানি এবং ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় নিড়ানি দিতে হয়। আগাছার পরিমাণ বেশি হলে তিন বার নিড়ানি দেয়ার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যে প্রথম, ২৫-৩০দিনের মধ্যে ২য় এবং ৪৫-৫০দিনের মধ্যে ৩য় নিড়ানি দিতে হয়। পানি নিষ্কাশনঃ পাটের জমি থেকে পানি নিষ্কাশন অতীব জরুরি। পাট ক্ষেতে পানি জমলে মাটির ভিতর বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। সেজন্য গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘ্নিত হয় যার ফলে গাছ স্বাভাবিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না।ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি হয় না।গাছের উচ্চতা বেশি হওয়ায় পর হতে পাট গাছ কিছুটা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। কিন্তু তোষা পাট দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। চারা পাতলাকরণঃ জমিতে গাছের সংখ্যা বেশি হলে চারা পাতলা করা প্রয়োজন। অধিক সংখ্যক চারা গাছের জন্য অধিক পরিমাণ খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজন হয়। গাছের সংখ্যা অধিক হলে চারা লিকলিকে হয়। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে সাধারণত সুস্থ ও সবল গাছ রেখে দুর্বল ও পোকায় খাওয়া গাছ উঠিয়ে ফেলতে হয়। সারিতে বপন করা হলে, সারির ভিতর ৫-৮সেমির মধ্যে একটি করে গাছ রেখে বাকি গাছ উঠিয়ে ফেলতে হয়। গাছের উচ্চতা ১০-২০ সেমি থাকাকালীন সময়ে ২ কিস্তিতে চারা পাতলা করতে হবে। কারণ বেশি পাতলা হলে গাছে শাখা প্রশাখা জন্মে, ঘন হলে গাছ তেমনি জীর্ণ শীর্ণ হয়। উত্তম আঁশ পাওয়ার জন্য কোনটাই ভাল নয়। বিকাল বেলা মাটিসহ চারা শূন্যস্থানে রোপণ করতে হয়। পাট পরিপক্বতার লক্ষণঃ আঁশ উৎপাদনের লক্ষ্যে বীজ বোনার ৪-৫ মাসের মধ্যে পাট কাটা সম্পন্ন হয়। পরবর্তী ফসল লাগানোর সময় অনুসারে পাট কাটার প্রয়োজন হয়। বর্ষার পানিতে ডুবে যাবার আশংকা থাকলে বাধ্য হয়ে পাট একটু আগেই কাটতে হতে পারে। ফলন ও গুণগত মানের নিরিখে পাটকে নিম্নলিখিত অবস্থায় কাটা যায়ঃ
ফসল কাটাঃকাস্তে দিয়ে পাটগাছ একেবারে গোঁড়া পর্যন্ত কেটে নেওয়া হয়। এরপর পাতা ঝরানোর জন্য কাটা পাটগাছগুলো ৩-৪ দিন জমিতে গাদা করে রাখতে হয়। তারপর ১৫-২২ সেমি ব্যাসের ছোট ছোট আঁটি বেঁধে পচাবার জন্য জলাশয়ে নেওয়া হয়। |
|||||||||||||||||||||||||||
তথ্যের উৎস | ১। বারি কৃষি প্রযুক্তি হাতবই। ২। বিনা উদ্ভাবিত উন্নত কৃষি প্রযক্তি পরিচিতি। ৩। উচ্চমুল্য ফসলের উৎপাদন প্রযুক্তি(প্রশিক্ষণ মডিউল-৪) NCDP Project. |