মুগ ডাল এর ফসলের চাষপদ্ধতির তথ্য

বর্ণনা প্রাথমিক পর্যায়ে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি খুব ধীরে হয়। তবে বীজ বপনের ৩-৪ সপ্তাহ পরে বৃদ্ধি খুব তাড়াতারি হয়, যা মোট জীবনকালের বৃদ্ধি হার অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। আবার ৬-৭ সপ্তাহের সময় বৃদ্ধি কিছুটা কমে গিয়ে ৭-৮ সপ্তাহ পড়ে বৃদ্ধি আবার তরান্বিত হয় এবং এ সময় ফুল ও পড তৈরি হয়ে থাকে। মুগডালের পড গাছের ৪র্থ গিরার গোঁড়া হতে বের হয়ে থাকে অর্থাৎ পড তৈরির ফুলের গোছা এখান থেকে প্রথমে আসতে থাকে। গাছের পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ গিরার পর ফুল ধারণ হার কমতে থাকে। প্রতি গাছের গোঁড়ায় ১০-১২ টি ফুল আসতে পারে। এবং কোন কোন সময় ২০ টি পর্যন্ত ফুল আসে। মুগডাল গাছ দিন নিরপেক্ষ প্রকৃতির।
চাষপদ্ধতি

চাষ উপযোগী আবহাওয়াঃ ১।৩০-৪০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রা মুগডাল চাষের উপযোগী। ২।সেচ ও বৃষ্টি নির্ভর উভয় অবস্থায় চাষ করা যায়। ৩। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

চাষ উপযোগী মাটিঃ প্রায় সব ধরণের মাটিতে মুগাডাল জন্মাতে পারে। যেমনঃ বেলে দোআশ,পলি দোআশ,এটেল দোআশ,কর্দমযুক্ত, ভারি মাটি। কিন্তু সব ধরনের মাতিতেই উত্তম। নিকাশ ব্যবস্থা থাকতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের কিছুটা লবণাক্ত এবং ক্ষারীয় মাটিতে মুগডাল চাষ করা যায়।

জমি তৈরিঃ ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও প্রয়োজনীয় মই দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরি করতে হবে। ২ টি চাষ দেয়ার পর নির্ধারিত পরিমাণ ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমপি সার ছিটিয়ে পুনরায় চাষ ও মই দিতে হবে। জমিতে রসের অভাব হলে হালকা সেচ দেয়া উচিত। অন্যথায় বীজ অঙ্কুরোদ্গমের ব্যাঘাত হতে পারে।

বপন পদ্ধতিঃ মুগডাল প্রধানত ছিটিয়ে বপন করা হয়। বপনের পর বীজগুলো ভালোভাবে মই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ছিটিয়ে ও সারি উভয় পদ্ধতিতে বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি। সারিতে বপন করলে ফসল পরিচর্চায় সুবিধা হয়।

বীজ হারঃ সারিতে বপনে বারি মুগ-২, বারি মুগ-৩ ও বারি মুগ-৪ এর জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ একরে ১০-১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বিনা মুগ-১, বিনা মুগ-২, বিনা মুগ-৩, বিনা মুগ-৬, বিনা মুগ-৭ চাষের জন্য হেক্টর প্রতি ২০-২৫ কেজি এবং একরে ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন। বিনা মু-৪ এর জন্য হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ কেজি এবং একর প্রতি ১০-১২ কেজি বীজের প্রয়োজন।

বপনের সময়ঃ এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা দেয়। রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বপনের জন্য পৌষ- মাঘ মাস উত্তম। খরিফ- ১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, খরিপ-২ মৌসুমে শ্রাবণ- ভাদ্র মাসে।

সারের পরিমাণঃ জমিতে একর প্রতি নিম্নরুপ সার দিতে হবেঃ

সারের নাম

সারের পরিমাণ

ইউরিয়া

১৬-২০ কেজি (একর)

এম পি

৩২-৩৪ কেজি (একর)

এম পি

১২-১৪ কেজি (একর)

আনুজীব

১-২ কেজি (একর)

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হয়। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য মুগডালের জন্য নির্ধারিত অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্চাঃ

vআগাছা দমনঃ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করার প্রয়োজন হয়। তথ্য সুত্রঃ বারি কৃষি প্রযুক্তি হাতবই। 

vসেচ: অতিবৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে বৃষ্টি না হলে সঠিক সময়ে বপনের জন্য বপনের পূর্বে বা পরে একটি সেচ প্রয়োজন। সেচ দিলে চারা গজানোর পর মালচিং করে দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ  ক্ষেত থেকে মুগ সংগ্রহ করা অসুবিধাজনক। কারণ মুগডালের সব ফল একসাথে পাকে না বিধায় কয়েকবারে সংগ্রহ করতে হয়। ফসল জমি হতে কেটে নিলে জমিত নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এরপর ফলগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়াই করে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত বীজ ৪-৫ দিন টানা রোদে শুকিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে মোটা পলিথিন ব্যাগ, মাটি বা টিনের পাত্রে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষণ করা হলে বীজ অনেক দিন ভালো থাকে। সংরক্ষিত বীজ অনার্দ্র পরিবেশে ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে। সংরক্ষিত বীজ আদ্র পরিবেশে রাখলে বীজে পোকা মাকড়ের আক্রমণ ঘটে,ফলে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। 

 

তথ্যের উৎস ১। বারি কৃষি প্রযুক্তি হাতবই ২। লবণাক্ত প্রবণ এলাকায় বোরো ধান ও মুগডাল উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা উপকূলীয় এলাকায় সাত্তি জেলায় লবণাক্ত ও পতিত জমিতে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। খামারবাড়ি,ফার্মগেট,ধাকা-১২১