পাট এর পোকার তথ্য

পোকামাকড় নাম ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে পোকামাকড় চেনার উপায় প্রধান ক্ষতির লক্ষণ
কালো বিছা পোকা (Black Hairy Caterpillar)
পাতা পূর্ণ বয়স্ক মথের রঙ কালো পাখা ধূসর বাদামী রঙের পাখার উপর কালো ফোটা আছে। পিছনের পাখা জোড়া কমলা রঙের। মথের পাখার উপরের শিরা ও কিনারা বরাবর অনেকগুলো ছোট ছোট কালো ফোটা আছে এবং ফোটাগুলো একত্রে মিশে মোটা কালো দাগের সৃষ্টি করে। এ মথের কীড়া প্রাথমিক অবস্থায় রং সবুজ, ক্রমেই বাদামী ও পরে কালো রঙের হয়। এদের শরীর ঘন শুঙ্গ দ্বারা আবৃত থাকে। পুনাঙ্গ কীড়া লম্বায় ৪সেমিঃ। জুন মাসের প্রথম হতে জুলাই মাস পর্যন্ত আক্রমনের সময় । প্রাথমিক অবস্থায় কীড়া পাতার সবুজ অংশ খায় এবং ক্রমেই বড় হতে থাকে পরে পাতা খায় ও গাছের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। এ পোকা গাছের গৌণ পোকা হিসেবে চিহ্নিত।
স্টেম গার্ডলার আগা পূর্ণবয়স্ক পোকা এক ধরণের বিটল। পূর্ণবয়স্ক পোকা এবং শূককীট উভয়েই গাছের জন্য ক্ষতিকারক। স্টেম গার্ডলারের শূককীট অর্ধনলাকার এবং হলুদ রঙের। এদের মাথা কিছুটা লম্বা, শুঙ্গ ছোট এবং মাথা দুভাগে বিভক্ত। বাকল কেটে বৃত্ত তৈরির করার ফলে গাছের ডগা ঢলে পড়ে ও শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
কাতরি পোকা (Indigo caterpillar) কাণ্ড , পাতা , কচি পাতা পূর্ণ বয়স্ক মথের রঙ কালো পাখা ধূসর বাদামী রঙের পাখার উপর কালো ফোটা আছে। পিছনের পাখা জোড়া কমলা রঙের। মথের পাখার উপরের শিরা ও কিনারা বরাবর অনেকগুলো ছোট ছোট কালো ফোটা আছে এবং ফোটাগুলো একত্রে মিশে মোটা কালো দাগের সৃষ্টি করে। এ মথের কীড়া প্রাথমিক অবস্থায় রং সবুজ, ক্রমেই বাদামী ও পরে কালো রঙের হয়। এদের শরীর ঘন শুঙ্গ দ্বারা আবৃত থাকে। পুনাঙ্গ কীড়া লম্বায় ৪ সেমিঃ। জুন মাসের প্রথম হতে জুলাই মাস পর্যন্ত আক্রমণ করে থাকে । প্রাথমিক অবস্থায় কীড়া পাতার সবুজ অংশ খায় এবং ক্রমেই বড় হতে থাকে পরে পাতা খায় ও গাছের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। এ পোকা গাছের গৌণ পোকা হিসেবে চিহ্নিত।
লাল মাকড় ( Red Mite) সব লাল মাকড় সাধারণত বয়স্ক এবং নাবী পাট বীজ ফসলে আক্রমণ করে থাকে। পূর্নাজ্ঞ স্ত্রী মাকড় খুবই ক্ষুদ্র লাল রঙের তবে খালি চোখে এদেরকে গাছের পাতার উল্টোদিকে দেখতে পাওয়া যায়। এরা ডিম্বাকৃতি ও লম্বায় ০.৪৮ মি মি। পুরুষ মাকড় পীতাভ লাল, লম্বায় ০.৩২ মি মি। পাতার উল্টোদিকে লাল মাকড় সূক্ষ্ম জাল তৈরি করে। জুলাই হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত আক্রমনের সময় ।প্রথমে এরা পরিপক্ক পাতার উল্টোদিকে বসে রস চুসে খায়, ফলে পাতা হলদে রং ধারণ করে। এরা গাছের নিচের দিকের পাতা খেতে খেতে উপরের দিকে উঠে এবং আক্রমণ ব্যাপক হলে এরা গাছের কচি পাতার রসও খেয়ে ফেলে। ফলে গাছের সব পাতা হলুদ বর্ণের হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে পড়ে। লাল মাকড় পাটের জন্য গৌণ ক্ষতিকারক হিসেবে পরিচিত।
কাটুই বা লেদা পোকা পাতা , ডগা , কচি পাতা পূর্ণবয়স্ক পোকা একটি গাঢ় বাদামী রঙের মথ। সামনের পাখনা লম্বা, কম প্রসস্থ; গাঢ় বাদামী রঙের, প্রত্যেকটি পাখনায় তিনটি কালো ছাপ এবং কয়েকটি সাদা অসম দাগ রয়েছে। পিছনের পাখনা ধূসর সাদাটে।পূর্ণবয়স্ক কীড়া ১.৫ ইঞ্চি বা ৩.৮ সেমি লম্বা এবং কালচে সবুজ রঙের। এদের পিঠে কালচে বাদামী ও হলুদ রঙের দাগ আছে। এদের গায়ে শুঙ্গ থাকে না এবং দেহের পাশে দুই সারি সাদা ফোটা আছে। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি হতে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত এই পোকার আক্রমণ দেখা যায় । কাটুই বা লেদা পোকা শূককীট অবস্থায় পাট গাছের ক্ষতি করে। পোকা চারা গাছের কচি পাতা আক্রমণ করে পরে ডগা কেটে ফেলে। গাছের উচ্চতা ১২০-১৫০ সে। মি বা ৩-৪ মিঃ হওয়া পর্যন্ত এই আক্রমণ চলতে থাকে। প্রথমে শূককীটগুলি গাছের কচি পাতা ছিদ্র করে খায়। বড় হওয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ পাতা খেতে থাকে। এই পোকা সাধারণতঃ দিনে মাটির নিচে থাকে এবং রাতে পাট গাছকে আক্রমণ করে। খাওয়ার পর এই পোকা আবার মাটিতে চলে যায়। এই পোকা মাঠের প্রায় ৮৫% পাট ফসল নষ্ট করে। ইহা ৌণ পোকা হিসাবে চিহ্নিত ।
হলুদ মাকড়
কাণ্ড , পাতা পূর্ণ বয়স্ক মাকড় আকারে খুবই ক্ষুদ্র ( ০.১৭ মি মি ও ০.০৯ মি মি চওড়া) এবং অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে এদের দেখা যায় না। স্ত্রী মাকড় প্রথমে সাদা থাকে। পরে আস্তে আস্তে হলুদ বর্ণের হয়। এই জন্য এদের কে সাদা মাকড়ও বলা হয়। স্ত্রী মাকড় ডিম্বাকৃতি এবং শরীরের উপরে মাঝখানে লম্বালম্বি একটা সাদা দাগ আছে। এদের চারজোড়া পা আছে। পুরুষ মাকড়ের শরীর মাঝখানে চওড়া এবং পিছন দিকে সরু। সাধারণত এরা পিছন দিক উচু করে রাখে। এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর এই সম্যে আক্রমণ করে । ইহা মুখ্য মাকড় হিসাবে চিহ্নিত । হলুদ মাকড় আগার কচি পাতার নিচের দিকে থাকে এবং আক্রমণ করে । কচি পাতার রস চুষে খায়। এতে পাতা কুকড়ে যায় এবং তামাটে রং ধারন করে । শেষ পর্যন্ত আক্রান্ত পাতা পরে যায় । আক্রমণ বেশী হলে পাতা ঝরে পড়ে, গাছের ডগা নষ্ট হয়ে যায় । ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও পড়ে শাখা-প্রশাখা বের হয় । হলুদ মাকড়ের আক্রমণ গাছের বৃদ্ধি ১৫-১৬ সেমি পর্যন্ত কমে যেতে পারে ।
ঘোড়া পোকা
আগা , পাতা , ডগা , কচি পাতা ডিম থেকে শূককীট বের হওয়ার পরপর এদের রং থেকে ঘিয়ে এবং ক্রমশ সবুজ হয় পুর্ণতাপ্রাপ্ত কীড়া প্রায় ১.৫ ইঞ্চি ও গায়ের রং সবুজ । পূর্ণবয়স্ক পোকা হালকা বাদামি রঙের মথ। সামনের পাখার ফোঁটা ও আঁকাবাঁকা কাল দাগ আছে। পুরুষ মথের শুঙ্গ পেকটিনেট ও স্ত্রী মথের শুঙ্গ সুত্রাকার ধরনের। বৈশাখের শুরু হতে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত জৈষ্ঠের মাঝামাঝি হতে আষাঢ়ের মাঝামাঝি পোকার সংখা মারাত্মক ভাবে বাড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হওয়ার পর পরই এরা পাট গাছের কচি ডগা ও পাতা আক্রমন করে। প্রথম অবস্থায় পাতা ছিদ্র করে খায় এবং বড় হতে থাকলে পুরো পাতা খেয়ে ফেলে। কোন কোন সময় কচি ডগা খেয়ে ফেলে এবং বারংবার কচি ডগাকে আক্রমন করার ফলে গাছের আগা নষ্ট হয়ে যায় এবং শাখা- প্রশাখা বের হয়। এতে পাটের ফলন ও আঁশের গুনগত মান কমে যায় । ইহা মুখ্য পোকা হিসাবে চিহ্নিত ।
চেলে পোকা পাতা , ডগা , কচি পাতা পূর্ণবয়স্ক পোকা ধূসর কাল রঙের উইভিল। লম্বায় প্রায় ২ মিঃলিঃ। সারা গায়ে সাদা সূক্ষ্ম কাটা আছে। এ পোকার সম্মুখে ছোট বাঁকা শুঁড় আছে। অগ্রবক্ষ লম্বা চওড়ায় সমান এবং পিছনের দিক গোলাকৃতির। সদ্যজাত কীড়া (গ্রাব) সাদা রঙের এদের কোন পা নেই দেখতে “c” এর মত বাঁকা পুর্ণাজ্ঞ কীড়ার দীর্ঘ ৩ মিমিঃ এবং প্রস্থ ১মিমিঃ । এপ্রিল মাস হতে জুলাই মাস পর্যন্ত পাট ক্ষেতে এবং আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে বীজ পাট ক্ষেতে আক্রমণ করে। পাটের চারা যখন ১২-১৫ সেমিঃ লম্বা হয় তখন এ পোকার আক্রমন হয়। চারা অবস্থায় এরা আলপিনের মত সূক্ষ্ম ছিদ্র করে পাতা খায় ।স্ত্রী পোকা শুঁড় দ্বারা গাছের ডগা ও গিটে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। এরা কাণ্ড ছিদ্র করে কাণ্ডের ভিতেরে চলে যায় এবং কাণ্ডের ছাল ও অন্যান্য কলা (টিস্যু) খেয়ে কাণ্ডের ভিতর মজ্জাতে প্রবেশ করে বড় হতে থাকে। আক্রান্ত স্থান হতে এক প্রকার আঠালো পদার্থ বের হয় এবং কীড়ার মলের সাথে মিশে শক্ত গিঁটের সৃষ্টি করে। পাট পচানোর সময় গিঁট পচে না। কোন কোন সময় ফল ও পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। ইহা মুখ্য মাকড় হিসাবে চিহ্নিত ।
উড়চুংগা
শিকড় , কান্ডের গোঁড়ায় পূর্ণবয়স্ক পোকা ৫ সেমিঃ পর্যন্ত লম্বা কালো বাদামি রঙের, মাথা সামনের দিকে চ্যাপ্টা, চোখগুলো বড়, লম্বা শুঙ্গ বিশিষ্ট যাহা বহুখণ্ডে বিভক্ত, পেছনের পা জোড়া বেশ মোটা ও লম্বা এবং পায়ে সারি সারি কাটা আছে। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত( এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ) আক্রমণ করে । পাটের চারা এ পোকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরা দিনের বেলা গর্তে লুকিয়ে থাকে এবং সন্ধার পর গর্ত হতে বের হয়ে চারা গাছের গোঁড়ার অংশ খায় ও গোড়া কেটে দেয়। এ পোকার আক্রমণের ফলে ক্ষেতের মাঝে মাঝে মরা গাছ দেখা যায়। অনাবৃষ্টির সময় এদের আক্রমন বেড়ে যায় এবং বৃষ্টিপাতের পর এদের আক্রমন কমে যায়। ইহা মুখ্য পোকা হিসাবে চিহ্নিত ।
বিছা পোকা/ শুয়ো পোকা (Hairy Caterpillar) পাতা পূর্ণবয়স্ক পোকা একটি মাঝারী আকারের হালকা বাদামী রং এর মথ। এদের পাখায় কালো ফোঁটা আছে। স্ত্রী মথ পাটের পাতার উল্টো দিকে গুচ্ছকারে ডিম পাড়ে। প্রথমে ডিমের রঙ সবুজ ক্রমশঃ বাদামি ও পরে কালো রঙ ধারণ করে। বাচ্চা কীড়া হালকা সবুজ বা হলুদ বর্ণের হয় এবং পূর্ণবয়স্ক কীড়া কমলা বা গাঢ় হলুদ রঙের হয়। লম্বায় ৪-৫সেমিঃ ও চওড়া ০.৮ সেমিঃ । ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর থেকে এরা পাতার নিচে থাকে ও পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পর্দার মতো করে ফেলে। দলবদ্ধভাবে ৬-৭ দিন থাকার পর এরা গাছের সব পাতায় ছড়িয়ে পড়ে ও সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এ অবস্থায় আক্রান্ত পাতা অনেক দূর থেকে সহজেই চেনা যায়। বড় হবার সাথে সাথে এরা সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো পাতা খেয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রমণ বেশি হলে এরা কচি ডগা পর্যন্ত খেয়ে গাছকে পাতাশূন্য বা ডাটাসার করে ফেলে ।ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও আঁশের ফলন কম হয়।এ পোকা পাটের মুখ্য পোকা হিসেবে চিহ্নিত
ছাতরা পোকা কচি পাতা ছাতরা পোকা মেস্তা ও কেনাফের একটি প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। স্ত্রী পোকা দেখতে লম্বাটে গোল এবং হালকা গোলাপি রঙের, পোকাগুলো একসাথে থাকে ও এদের উপরিভাগ সাদা তুলার মতো গুড়ায় আবৃত থাকে। এরা ৫ মি মি লম্বা ও ৩ মি মি চওড়া হয়। এদের দেহের পিছনেও সাদা সুতার মতো লেজ আছে তবে তা পুরুষ পোকার চেয়ে অনেক ছোট। তবে এর পাখায় শিরা খুবই কম। এদের দেহের পিছন দিকে ১ মি মি লম্বা সাদা সুতার মতো লেজ আছে। পুরুষ পোকার শুঙ্গ স্ত্রী পোকার চেয়ে অনেক লম্বা। স্ত্রী পোকার কোন পাখনা নেই । ছাতরা পোকা কচি পাতার উপরের দিকে, শাখা - প্রশাখায় ডগায়, পাতার বোঁটায় , গোঁড়ায় অথবা কাণ্ডের কচি ডগায় অবস্থান নেয়। ছাতরা পোকা গাছের ডগায় দল বেঁধে বাস করে এবং কচি ডগা ও পাতার রস চুসে খায়। ফলে কচি ডগা ও পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে। কোঁকড়ানো পাতাগুলো ঝড়ে যায় ও আক্রান্ত স্থান হতে শাখা প্রশাখা বের হয়। এতে লম্বায় বাড়ে না ও আক্রান্ত স্থান ভাল করে পচে না ফলে আঁশ নিম্ন মানের হয়। বীজ ফসলে আক্রমণ করলে বীজের মান খুব কম হয়।