ক্যাটাগরি

ফসলের রোগ



ফসলের জাত পরিচিত

ফসলের পোকামাকড়

সেচ ব্যবস্থাপনা

আবহাওয়া ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা

চাষপদ্ধতি

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

মৃত্তিকা ও সার ব্যবস্থাপনা

ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

আগাছা ব্যবস্থাপনা

বীজ ও বীজতলা

খামার যন্ত্রপাতি

কৃষি উপকরণ

ফসলের পুষ্টি মান

বাজারজাতকরণ

রোগের তথ্য

ফসল রোগের নাম রোগের কারণ ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে প্রধান ক্ষতির লক্ষণ
আলু আলুর ষ্টেম ক্যাঙ্কার বা স্কার্ফ রোগ Rizoctonia solani ছত্রাক কাণ্ড এ রোগে আক্রান্ত অংকুরের মাথা এবংস্টোলনে দাগ দেখা যায়। গাছের তেজ নষ্ট হয়ে যায় । মারাত্বক আক্রান্ত হলে গাছের আগা খাড়া হয়ে যায়। বড় গাছের গোড়ার দিকে লম্বা লালচে বর্ণের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কান্ডের সাথে ছোট ছোট টিউবার দেখা যায়। আক্রান্ত বীজ আলুতে কালো কালো দাগ পড়ে এবং পচে নষ্ট হয়ে যায়।
আলু শুকনা পচা রোগ Fusarium spp ছত্রাক কাণ্ড আলুর গায়ে কিছুটা গভীর বাদামী চক্রাকার দাগ পড়ে । আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়। প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে, পরে তা শুকিতে শক্ত হয়ে যায় । আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাজ এবং কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা যায় ।
আলু মোজাইক মোজাইক ভাইরাস কাণ্ড , পাতা আক্রান্ত পাতা হলদে হয়ে যায়, বিচিত্র আকারের দাগ দেখা যায়, কুকড়ে যায় । গাছ ছোট হয়ে যায়।
আলু পাতা মোড়ানো রোগ পাতা মোড়ানো ভাইরাস জাব পোকা কাণ্ড , পাতা আক্রান্ত পাতা খস খসে , খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায়। আগার পাতার রঙ হালকা সবুজ হয়, গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়। কখনো পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রঙের হয়। গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে দাড়েয়ে থাকে। গাছ নাড়া দিলে ঝন ঝন শব্দ হয় । আলু আকারে ছোট ও সংখ্যায় কম হয়
আলু নেতিয়ে পড়া রোগ(ডেমপিং অফ)  Sclerotium rolfsi নামক ছত্রাক কাণ্ড , কান্ডের গোঁড়ায় চারার গোড়া পচে মরে যায় । অনেক সময় সব চারা গাছ মরে শুকিয়ে যায় । 
আলু আলুর কালো পা বা নরম পচা রোগ Erwinia carotovora নামক ব্যাক্টিরিয়া কাণ্ড , ফল মাঠে গাছের গোড়ায় কালো দাগ পড়লে তাকে কালো পা এবং গাছ ও টিউবার আক্রান্ত হলে নরম পচা রোগ বলে । আক্রান্ত গাছের টিউবার পচে যায় । সংরক্ষিত আলুতে এ রোগে আক্রান্ত আলু পচে যায় এবং পচা আলুতে এক ধরণের উগ্র গন্ধের সৃষ্টি হয়। চাপ দিলে আলু থেকে রস বেরিয়ে আসে যা অন্য সুস্থ আলুকে আক্রমন করে । আক্রান্ত অংশ বাদামি রংয়ের ও নরম হয় যা সহজেই সুস্থ অংশ থেকে আলাদা করা যায়
আলু আগাম ধ্বসা (আর্লি ব্লাইট রোগ) Alternaria solani নামক ছত্রাক কাণ্ড , পাতা , ডগা প্রথমে নিচের পাতায় ছোট ছোট কাল থেকে বাদামি চক্রাকার দাগ দেখা যায়। দাগের চারিদিক হলুদ সবুজ বলয় দেখা যায়। যা দেখতে আনেকটা গো- চোখের মত। আক্রমন বেশি হলে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে যায়। গাছ হলদে হয়ে পাতা নুয়ে পড়ে , অকালে মারা যায়।
আলু আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা (লেইট ব্লাইট) Phytophtora infestans নামক ছত্রাক আগা , কাণ্ড , পাতা , ডগা , কচি পাতা , ফল , শিকড় , কান্ডের গোঁড়ায় আক্রমনে প্রথমে পাতায় ছোপ ছোপ বা ভেজা ভেজা ফ্যাকাসে গোলাকার বা এলোমেলো দাগ দেখা দেয় । গাছের কান্ড এবং টিউবারেও রোগের আক্রমন দেখা যায় । পাতার নিচে সাদা সাদা পাউডারের মত ছত্রাক দেখা যায় ।পাতার উপরে বাদামি দাগ গুলো বেড়ে বৃত্তাকার রেখার সৃষ্টি করে পরে পাতা ও কান্ড শুকিয়ে যায়।এসময় মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে। কম তাপমাত্রা এবং কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ায় আক্রান্ত গাছের পুরো লতাপাতা ও কান্ড পচে যায় এবং ২-৩ দিনের মধ্যেই সমস্ত গাছই মেরে ফেলতে পারে । আক্রান্ত ক্ষেতে পাতা পচার পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় ।
পাট এনথ্রাকনোজ (Anthracnose)
ছত্রাক কাণ্ড এ রোগে চারাগাছ আক্রান্ত হলে কাণ্ডে ও পাতায় বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। বয়স্ক গাছে কাণ্ডের উপর কালো ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। অনেক সময় একাধিক দাগ একত্রিত হয়ে বড় রকমের ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং কালক্রমে তা বৃদ্ধি পেয়ে কাণ্ড কে ঘিরে ফেলে। অনেক জায়গায় আক্রান্ত ছাল ফেটে যায় এবং ভিতরের আঁশ ফাটলের মধ্য দিয়ে ছোবড়ার মত বেরিয়ে আসে এবং শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায় । এ রোগে কান্ডে গিটের সৃষ্টি হওয়ায় ঐ স্থান সহজে পচে না । আঁশ কালো দাগ বিশিষ্ট ও গিটযুক্ত হয়। ফলে আঁশের মুল্য কমে যায় ।
মরিচ এনথ্রাকনোজ
ছত্রাকের আক্রমন কাণ্ড , পাতা , ফল শুরুতে গাছের নতুন ডগা ও ফুলের কুড়িতে রোগের লক্ষণ দেখা দেয় । আক্রান্ত ফুল নুয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে, রোগ বাড়ার সাথে সাথে ফলের বোটা হতে ডাটায় সংক্রমিত হয় এবং ক্রমেই গাছের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে । পড়ে গাছের বাকল প্রথমে বাদামী হয় এবং পরে ডোরাকাটা সাদা দাগে পরিনত হয় । আক্রান্ত মরিচে কালো কালো দাগ পড়ে এবং বিকৃত হয়ে শুকিয়ে যায় ।
পাট কাণ্ডপচা ( Stem Rot)
ছত্রাক কাণ্ড বীজ অঙ্কুরোদগমের সময় বীজদল এবং এর নিচের কাণ্ডের উপর গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে। এই দাগ ক্রমে বড় হয়ে সম্পূর্ণ বীজকে পচিয়ে ফেলে। এর ফলে মাটি হতে বীজ গজানোর পূর্বেই গাছ মরে যায়। আবার কখনও মাটির উপরে আসার পর বীজ গজিয়ে পচে যায়। অনেক সময় অঙ্কুরিত বীজ হতে উৎপন্ন চারাগাছ কিছুটা বড় হওয়ার পর গরম আবহাওয়ায় চারা গাছের কাণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত গাছ ভাঙ্গিয়া নেতিয়ে পড়ে। বড় চারাগাছে প্রথমে পাতার ফলক আক্রান্ত হয়। এর পর পাতা হতে রোগ বোঁটায় ছড়িয়ে পরে। আক্রান্ত পাতার ফলক দুর্বল হইয়া অনেক সময় ঢলে কাণ্ডের গায়ে লেগে যায়। এর ফলে দাগ ক্রমশ বাকলে বৃদ্ধি পায়, পরে বাকল পচে যায়। বাকলের এই পচনের ফলে অনেক সময় গাছ মারা যায়।
পাট কালোপট্টি (Black Band) ছত্রাক কাণ্ড প্রথমে আক্রান্ত গাছের গোঁড়ার দিকে মাটি হতে ৩-৫ ফুট উপরে বাদামি রঙের দাগ পড়তে দেখা যায়। ক্রমশ এই দাগ কালচে রঙ ধারণ করে। দাগ বৃদ্ধির সাথে সাথে এটা কাণ্ডকে ঘিরে ফেলে। এ জন্য এই রোগকে কালোপট্টি রোগ বলে। এই বেষ্টনী ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকে। একাধিক কালোপট্টি গাছের কাণ্ডে দেখা দিতে পারে। ধীরে ধীরে এরা অনেক সময় যুক্ত হয়ে সমস্ত কাণ্ডকে কালো করে ফেলে। আক্রান্ত গাছ নিস্তেজ হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে পড়ে। অনেক সময় গাছের কাণ্ড এতই দুর্বল হয় যে বাতাসে ভেঙ্গে যায়। আক্রান্ত গাছের কাণ্ডে অসংখ্য কালো কালো পিকনিডিয়া দেখা যায়। পাতা বিহীন মৃত কাণ্ডগুলোর গায়ে হাত দিয়ে ঘষা দিলে হাত কালো হয়ে যায়।
টমেটো নাবী ধ্বসা বা লেট ব্লাইট বা মড়ক
ছত্রাক কাণ্ড , পাতা , কান্ডের গোঁড়ায় পাতার উপর ফ্যাকাশে অথবা ফিকে সবুজ রঙের গোলাকার অথবা এলোমেলো পানি ভেজা দাগ পড়ে। কুয়াশাছন্ন মেঘলা আবহাওয়ায় দাগ সংখ্যা ও আকার দ্রুত বাড়তে থাকে। গাছের পাতা ও কাণ্ড বাদামী থেকে কালচে আকার ধরণ করে। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে গাছের কাণ্ড ও সবুজ ফলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগের লক্ষণ দেখা দেবার ৩-৪ দিনের মধ্যে গাছ ঝলসে যায় ও দ্রুত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে।